Recents in Beach

চাকরির নামে মানব পাচার সম্পাদকীয় মতামত Editorial News Prothom Alo for BCS and Others Written


চাকরির নামে মানব পাচার

সরকারের কঠোর আইন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি কিংবা উন্নয়নের বিপুল আয়োজন—কোনো কিছুই বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার বন্ধ করতে পারছে না। ইরাকে মানব পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার লিটন মিয়া ও তাঁর সহযোগী আজাদ রহমানের কাছ থেকে পাচারের অবিশ্বাস্য সব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, অসদুপায়ের দায়ে মেডিকেল সহকারী পদ থেকে চাকরি হারানো লিটন মিয়া নিজেকে বড় চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ইরাকে নার্স পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৩৫ জনের বেশি নারীকে সেখানে পাচার করেছেন। সেখানে যাওয়ার পর নারীরা দেখতে পান চাকরির বিষয়টি পুরোপুরি ধাপ্পাবাজি। তাঁদের সেখানে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়। অনৈতিক কাজে ব্যবহার জন্য নারীদের অন্তত ছয়জনকে লিটন মিয়া বিভিন্ন সময় বিয়ে করে ইরাকে নিয়ে গেছেন। বিয়ে ও চাকরির প্রতারণার শিকার এক নারী ‘সেফ হোম’ থেকে অন্যের সহায়তায় দেশে পালিয়ে এসে র‌্যাবকে পুরো ঘটনা জানালে লিটন মিয়ার প্রতারণা ফাঁস হয়ে পড়ে।


চক্রটি বিদেশে নারীদের পাঠিয়ে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করত এবং পুরুষদের সেখানে জিম্মি রেখে দেশে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করত। তারা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ইরাকে নেওয়ার জন্য একেকজনের কাছ থেকে তিন-চার লাখ টাকা নিত। ইরাকে নেওয়ার পর পুরুষদের সেফ হোমে আটকে রেখে আরও দু-তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করত আর নারীদের সেখানে নেওয়ার পর বিক্রি করে দেওয়া হতো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে মানব পাচারবিরোধী আইন জারি হওয়ার পর গত প্রায় আট বছরে দেশে ৫ হাজার ৭১৬টি মামলা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৪৭টি, অর্থাৎ মাত্র ৪ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বিচারাধীন প্রায় ৪ হাজার ৪০৭টি মামলা। বিচারপ্রক্রিয়ার মন্থরগতি ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধী চক্রের বেকসুর খালাস পাওয়ার কারণেই মানব পাচার বন্ধ হচ্ছে না।

কেবল ইরাকে নয়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়া ও ইউরোপেও মানুষ পাচার হচ্ছে। গত মাসে লিবিয়ায় বেশ কিছু পাচার হওয়া মানুষকে উদ্ধার করা হয় আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সহায়তায়। উদ্বেগের বিষয়, এসব ক্ষেত্রে পাচারকারীদের হদিস পাওয়া যায় না। ইউরোপে পাচারের জন্য লিবিয়াকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গত কয়েক বছর ইউরোপে যাওয়ার পথে বহু মানুষ ডুবে মারা গেছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকও আছেন।


এত অনিশ্চিত ও যন্ত্রণাকর অভিজ্ঞতার পরও বাংলাদেশের তরুণেরা কেন দলে দলে বিদেশে যাচ্ছেন? এর কারণ দেশে কর্মসংস্থানের অভাব। শনিবারই পত্রিকায় বের হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ শতাংশ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকার। দেশে কর্মসংস্থান নেই বলেই চাকরিপ্রত্যাশীরা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

অতএব, মানব পাচার বন্ধ করতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথম পাচারকারী ও এদের নেপথ্যের হোতাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কেউ যাতে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে না যেতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত দেশে উন্নয়নকাঠামোকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থাকবে। কর্মসংস্থানহীন উন্নয়ন দিয়ে মানব পাচার ঠেকানো যাবে না।


 

Post a Comment

0 Comments