Recents in Beach

বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতির দায় সরকারের - সম্পাদকীয় মতামত Editorial News Prothom Alo for BCS and Others Written


প্রশাসন ও ছাত্ররাজনীতি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে যা বলেছেন, সেখানে সত্য আছে কিন্তু নিজেদের দায়িত্বের বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে গেছেন। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাঁরা শিক্ষার মূল দায়িত্বে আছেন, তাঁরা সেখানকার প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের কথায় ওঠেন আর বসেন। এই ব্যক্তিত্বহীনতা শিক্ষকতার মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।

ওবায়দুল কাদের প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের কথা বললেও তাঁরা কীভাবে, কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন, তা খোলাসা করেননি। না করলেও দেশবাসীর বুঝতে বাকি নেই যে তাঁরাই সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের নেতা। বিভিন্ন সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ক্ষমতাসীনদেরই আধিপত্য বজায় থাকে। তবে একটানা ১২ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগ আমলে সেটি আরও বেড়েছে। আর ছাত্রসংগঠনগুলোর কথা বিবেচনায় নিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনের কার্যত কোনো অস্তিত্ব নেই। ‘গণরুম সংস্কৃতির’ মাধ্যমে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠন কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে, তা কারও অজানা নয়। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও খুবই বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু বাজে দৃষ্টান্ত যাঁরা স্থাপন করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নজির তিনি দেখাতে পারেননি। কাদের জন্য ছাত্ররাজনীতি আকর্ষণ হারাচ্ছে, তা–ও বলেননি তিনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না তিন দশক ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠন জয়লাভের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর সেই পথ ধরেনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সুষ্ঠু ও সুস্থ চর্চার জন্য নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে সত্য ভাষণ রয়েছে কিন্তু এই পরিস্থিতির দায় তাঁর সরকার এড়াবে কীভাবে? এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি পাল্টানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতা কেন একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয় না, কেন দলীয় আনুগত্য সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়, তার কী জবাব দেবেন ওবায়দুল কাদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্য যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেষ কর্মদিবসে ১৩৮ জনকে নিয়োগ দিয়ে গেলেন, সেটি কিসের জোরে? সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিল না কেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের ভাগ বসানোর অভিযোগ নতুন নয়, অথচ এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অনিয়ম বন্ধে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে স্পষ্ট ভূমিকা থাকা দরকার। বর্তমান ধারার ছাত্ররাজনীতির লাগাম টানার ওপরই নির্ভর করছে উচ্চশিক্ষালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে কি না।

বিশ্বের সেরা ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্ষেপ 
করেন। কিন্তু উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তা কি সরকার নিয়েছে? উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশে শিক্ষায় বরাদ্দের হার সবচেয়ে কম। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হলে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো ও তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

তবে দলীয়করণ ও ছাত্ররাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি চলছে, তার অবসান ঘটাতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ও পরিবেশ কোনোটাই নিশ্চিত করা যাবে না। আর এটা করার দায় পুরোপুরি সরকারের।


 বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতির দায় সরকারের


Editorial News  Prothom Alo


সম্পাদকীয় থেকে আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments