Recents in Beach

বাল্যবিবাহের মহামারি - সম্পাদকীয় মতামত Editorial News Prothom Alo for BCS and Others Written


ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফেরানোর পথ কী

বাল্যবিবাহের হার আগে থেকেই বাংলাদেশে বেশি ছিল। সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগই মোকাবিলা করতে পারছিল না এই সামাজিক ব্যাধি। করোনাকালে গত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্যবিবাহ মহামারিতে রূপ নিয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ও বাল্যবিবাহের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়।

গতকাল রোববার ডেইলি স্টার-এর খবর থেকে জানা যায়, কুড়িগ্রামের সরদব উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ৯ জন ছাত্রী ছিল। বিদ্যালয় খোলার পর দেখা যায়, নার্গিস নাহার নামের একজন ছাত্রী শ্রেণিকক্ষে ফিরে এসেছে, বাকিদের বিয়ে হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ে ২২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ জন মেয়েশিক্ষার্থী ছিল, যাদের বেশির ভাগেরই বিয়ে হয়ে গেছে। প্রথম আলোর সাতক্ষীরা প্রতিনিধির খবর অনুযায়ী, সেখানকার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অন্তত ৫০ জন ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। তারা আর শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসেনি।

এই চিত্র কেবল দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলার নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্রই অভিন্ন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, করোনাকালে বাল্যবিবাহ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। ১৩ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে প্রায় ৪৮ শতাংশ মেয়ের। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১টি জেলার ৮৪ উপজেলায় জরিপ চালিয়ে সংগঠনটি এ তথ্য পেয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ জেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরগুনায় ১ হাজার ৫১২, কুড়িগ্রামে ১ হাজার ২৭২ ও নীলফামারীতে ১ হাজার ২২২টি বাল্যবিবাহ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্বাভাবিক অবস্থায় যেসব নজরদারি ছিল, করোনাকালে তার ঘাটতি ছিল। ফলে অসচেতন ও অসচ্ছল মা-বাবা মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন ও শিক্ষকদের যে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল, তা নিতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।

বাল্যবিবাহ নামের যে সামাজিক ব্যাধি বাংলাদেশকে গ্রাস করতে বসেছে, তা থেকে রেহাই পেতে হলে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক জাগরণ প্রয়োজন। যেসব অভিভাবক ও নিবন্ধনকারী জেনেশুনে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ব্যবস্থা নিতে হবে তাঁদের প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধেও। বাল্যবিবাহ রোধে ২০১৭ সালে জারি করা আইন নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। এতে ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়ে ও ২১ বছরের কম বয়সের ছেলের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হলেও ‘বিশেষ ছাড়’ দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলো শুরু থেকে এ ছাড়ের বিরোধিতা করে আসছে। যে দেশে বয়স বাড়িয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়, সে দেশে বিশেষ ছাড় আইনকে অকার্যকর করার জন্য যথেষ্ট।

বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচি। কিন্তু সেটি তো কেবল ‘কাজির গরু গোয়ালে নেই খাতায় আছে’ থাকলে হবে না। করোনাকালে কত শিক্ষার্থী ঝরে গেছে, তাদের মধ্যে কতজন বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে, তার হিসাব নেওয়া হোক। সম্ভব হলে তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় পড়াশোনা চালু রাখার ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহের কারণে কোনো মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হবে না, এ নিশ্চয়তা দিতে হবে অভিভাবক, সমাজ ও সরকারকেই।

সম্পাদকীয় থেকে আরও পড়ুন


 বাল্যবিবাহের মহামারি 

Post a Comment

0 Comments