Recents in Beach

ইউজিসি ও উচ্চশিক্ষা - সম্পাদকীয় মতামত Editorial News Prothom Alo for BCS and Others Writte


বিজ্ঞপ্তি দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না


 বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্কবার্তা দিয়েছে, যদিও তারা ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের এ বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হলে বা কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় ইউজিসি নেবে না।

ইউজিসির এই সতর্কবার্তাকে আমরা স্বাগত জানাতে পারতাম, যদি এ ঘটনা প্রথম ঘটত। এর আগেও বহুবার ইউজিসি এ ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়ে সতর্ক করেছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। কিন্তু তাদের এসব সতর্কবার্তা কতটা কাজে লেগেছে?

ইউজিসি বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। আইনানুযায়ী ইউজিসির অনুমোদন না নিয়ে কোনো সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে না। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি সে রকম কিছু করে থাকে, ইউজিসির উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রয়োজনে তারা এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সহায়তা নেবে।

সমস্যা হলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেওয়া না দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউজিসির ভূমিকা অত্যন্ত গৌণ। পূর্বশর্ত পূরণ না করেই রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অনুমোদন পেয়ে যায়। ইউজিসি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দিয়েছে, তার মধ্যে দু-একটা উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। আদালতের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সাপেক্ষ। ফলে শর্ত পূরণ না করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়া চলছে, তার কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের গাফিলতির কারণে হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য বা অনুমোদনে বিলম্ব হলে সেই দায় সরকারকে নিতে হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিলেও সুপারিশটি আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।

ইউজিসির বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য যে অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, যেমন অনুমোদনের আগেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা, অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা, সেসব বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষার মান রক্ষার স্বার্থেই উদ্যোক্তাদের শর্ত মেনে চলতে হবে, উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, অনুমোদিত ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে। এসব শর্ত যারা পূরণ করবে না, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর অধিকার থাকা উচিত নয়। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা দেওয়ার নামে সনদ-বাণিজ্য করে থাকে। আগে এটি মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছিল। হালে কিছুটা রাশ টেনে ধরা সম্ভব হলেও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। এ বিষয়ে ইউজিসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে আশা করি।

যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী সব শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান না, সেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু সেটি যাতে সনদ-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত না হয়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই। কেবল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করলেই ইউজিসির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আইন মেনেই সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হতে হবে।


ইউজিসি ও উচ্চশিক্ষা

Post a Comment

0 Comments