Recents in Beach

শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ - সম্পাদকীয় মতামত Editorial News Prothom Alo for BCS and Others Writte


শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর

দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার খবরটি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস তৈরি করেছিল। আশা করা গিয়েছিল, সব শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসবে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ফিরে আসতে পারেনি। মাধ্যমিক স্তরের অনেক মেয়েশিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারেনি বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে; যদিও ১৮ বছরের আগে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আর ছেলেশিক্ষার্থীরা ফিরে আসতে পারেনি পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে মা–বাবা তাদের কাজে পাঠিয়েছেন। দুটোই সামাজিক সমস্যা।

১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না। আমরা ধারণা করেছিলাম, ধীরে ধীরে উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে মাঠপর্যায় থেকে যেসব খবর আসছে, তা খুবই হতাশাজনক। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ছিল ৬৭ শতাংশ, ১৮ সেপ্টেম্বর সেটি এসে দাঁড়ায় ৫৮ শতাংশে এবং ২৫ সেপ্টেম্বর সেই হার আরও কমে ৫৬ শতাংশে নেমে এসেছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে ১৫ শতাংশ, নবম শ্রেণির ১১ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির ২ শতাংশ। প্রাথমিক স্তরে উপস্থিতি তুলনামূলক আশাব্যঞ্জক।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী করোনা সংক্রমণের আগে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ছিল ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে। বর্তমানে সেটি ৫৬ শতাংশে নেমে আসা উদ্বেগজনক। তবে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন, উপস্থিতির হার কমে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে এসব শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর করোনা উপসর্গ ধরা পড়ায় অনেক মা–বাবা সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন। তাই একে স্থায়ী সমস্যা ভাবা ঠিক হবে না। একজন শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উপস্থিতি কম হলেও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৯৩ শতাংশ অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে।

তাই বলে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয়টি উপেক্ষণীয় নয়। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ১২ সেপ্টেম্বর এসেও পরে অনুপস্থিত থেকেছে, তাদের অনাগ্রহের কারণটি খুঁজে বের করতে হবে। অনেক অভিভাবক বলছেন, সপ্তাহে এক দিন ক্লাস হওয়ার কারণে তাঁরা শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। এ সমস্যা সমাধানে শ্রেণিকক্ষে পাঠের সময় বাড়াতে হবে। করোনা সংক্রমণের হার কমতির দিকে। ফলে যেসব অভিভাবক এখনো ভয়ভীতিতে আছেন, তাঁরা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠাবেন আশা করি। যেসব ছেলেশিক্ষার্থী পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য কাজে যেতে বাধ্য হয়েছে, তাদের আউট অব এডুকেশন প্রোগ্রামে (পিইডিপি-৪) যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। যেসব মেয়েশিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে, তারা যাতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে, সে বিষয়েও কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে বিয়ের পরও মেয়েদের পড়াশোনা চালানোর অসংখ্য উদাহরণ আছে।

২০২০ সালের ১৭ মার্চের আগে যারা শ্রেণিকক্ষে ছিল, তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ কর্মসূচি থাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিকেও এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

 

Post a Comment

0 Comments