আন্তর্জাতিক বাজারে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার কিটের দাম কমলেও বাংলাদেশে জনগণকে বেশি টাকা দিয়েই করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি জানেন না, তা নয়। তাঁরা বিষয়টি ‘ভাবছি, দেখছি’ বলে সময়ক্ষেপণ করছেন। নমুনা পরীক্ষার দাম নিয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা হলেও দাম কমানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে জনগণকে বেশি অর্থ ব্যয় করেই করোনা পরীক্ষা করাতে হয়।
বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রতি কিটের জন্য দিতে হয় তিন হাজার টাকা। অন্যদিকে বিদেশগামী ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার জন্য দিতে হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় করোনা পরীক্ষা প্রায় বিনা মূল্যেই করা হয়। মাত্র ৩০ টাকা নিবন্ধন ফি নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ভিড় বেশি থাকায় মানুষের ভোগান্তিও বেশি। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরে আসার ঘটনাও ঘটছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের অভিঘাত কম হলেও তা দ্রুত ছড়ায়। সে ক্ষেত্রে বেশি বেশি পরীক্ষা জরুরি ছিল। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের দীর্ঘ লাইন ও বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে অনেকে ছোটখাটো উপসর্গ সত্ত্বেও পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ফলে তাঁদের দ্বারা অন্যদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়।
গতকাল বুধবার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর খবর থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে একটি পিসিআর কিটের দাম ছিল দুই থেকে তিন হাজার টাকা। এখন সেটি কমে ১৪৫ থেকে ৯৪৫ টাকায় পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে প্রতি পরীক্ষার ব্যয় ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করলেও সেবাদাতারা লাভ করতে পারবেন। ২০২০ সালে করোনা পরীক্ষার নির্ধারিত ফি ছিল ৩ হাজার ৫০০ টাকা। কোভিড-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গত বছর এপ্রিলেই নমুনা পরীক্ষার ফি অর্ধেক কমানোর সুপারিশ করেছিল। সে সময় নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের দাম ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও নমুনা পরীক্ষার ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা করার কথা বলেছিল। কিন্তু সরকার সেসব সুপারিশ আমলে না নিয়ে নমুনা ফি তিন হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ করে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে আরটি-পিসিআর কিটের দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তিন হাজার টাকা রাখার কোনো যুক্তি নেই। গত মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য ২ হাজার টাকা এবং বিদেশগামী ব্যক্তিদের জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা নমুনা পরীক্ষার ফি কমানোর বিষয়ে কাজ করছেন। সরকারি অফিসের সমস্যা হলো, যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার, তখন তারা নিতে পারে না। সবখানেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ। কিন্তু তাদের সামান্য গাফিলতি যে জনগণের অসামান্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেটি বুঝতে তারা অপারগ।
বর্তমানে দেশে অমিক্রন ধরনের সংক্রমণ তুঙ্গে। নমুনা পরীক্ষার ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই। সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে পরীক্ষাও। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র খুলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে; ডেলটার সময়ে যেমনটি করা হয়েছিল রাজশাহীসহ বেশ কিছু এলাকায়। তখন সম্ভব হলে এখন হবে না কেন?
0 Comments