Recents in Beach

জনশুমারি ২০২২,চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নির্ভুল তথ্য বেরিয়ে আসুক - সম্পাদকীয় মতামত Editorial News Prothom Alo for BCS and Others Written



 জনশুমারি ২০২২,চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নির্ভুল তথ্য বেরিয়ে আসুক


জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর এর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, জনশুমারিতে যে জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে, প্রকৃত জনসংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসাবে, দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, জনশুমারিতে প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করা হলেও তালিকায় যুক্ত করা হয়নি।

জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। দুই দিক থেকেই এটি হতে পারে। প্রথমত, তথ্য সংগ্রহের সময় যদি বাড়ির কোনো সদস্য অনুপস্থিত থাকেন। দ্বিতীয়ত, কোনো কারণে তথ্য সংগ্রহকারী যদি তাঁর আওতাধীন সব বাড়িতে যেতে অসমর্থ হন। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাঁদের বাড়িতে কোনো তথ্য সংগ্রহকারী যাননি।


জনশুমারি ২০২২,চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নির্ভুল তথ্য বেরিয়ে আসুক

বিভিন্ন মহলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনেই জনশুমারি ও গৃহগণনা করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন বের হলে সব সন্দেহ ও সংশয় দূর হবে। জাতিসংঘ নীতিমালা অনুযায়ী, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দ্বারা শুমারি-উত্তর তথ্য যাচাই করতে হয়। সরকার শুমারি-উত্তর তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএসকে। বিআইডিএস সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও গবেষণাক্ষেত্রে এর যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতা আছে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে জনশুমারি-উত্তর যাচাইয়ে নতুন করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে না। প্রতিনিধিত্বশীল জরিপের মাধ্যমেই এটি করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোন এলাকায় জনশুমারিকালে বেশি তথ্য বাদ পড়তে পারে, কোন এলাকা দুর্গম, সেসব বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাথায় রাখতে হবে। যেমন শহরে বস্তি এলাকায় বেশি বাদ পড়ার আশঙ্কা থাকে। এবার জনশুমারিকালেই সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে বন্যা হয়েছিল। ফলে সেখানেও তথ্য পেতে সমস্যা হয়েছে। আবার বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশিদের তথ্য নেওয়া হলেও ভাষাগত কারণে সেটি পূর্ণাঙ্গ না-ও হতে পারে। শুমারি-উত্তর যাচাইয়ে এসব আমলে নিলে জনশুমারি অনেকটাই ত্রুটিমুক্ত হবে আশা করা যায়।

এবারের জনশুমারির সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি হওয়া। পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ ও নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। এর আগের সব জনশুমারিতে পুরুষের পাল্লা ভারী ছিল। এর কারণ, নারীর আয়ু বেড়ে যাওয়া। অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া এবং আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতির যে চিত্র জনশুমারিতে উঠে এসেছে, সেসব ইতিবাচক বলে মনে করি।

তবে উদ্বেগের কারণ হলো, হিন্দুসহ সব ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া। যে আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই আদর্শ সমুন্নত থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়।

জনশুমারি কেবল জনসংখ্যা কমা বা বাড়ার পরিসংখ্যান নয়, এর ভিত্তিতেই দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। জনশুমারিতে কোনো গলদ থাকলে উন্নয়ন পরিকল্পনায়ও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। অতএব উন্নয়নের সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য নির্ভুল জনশুমারির বিকল্প নেই।


Post a Comment

0 Comments